দীর্ঘ ৭ বছর ধরে কাঁদছে নাফ পাড়ের জেলেরা: মাছ শিকার বন্ধ হলেও আসছে মাদক

গিয়াস উদ্দিন ভুলু, কক্সবাজার জার্নাল •

কক্সবাজার সীমান্ত নগরী টেকনাফের নাফ নদে মাছ শিকার বন্ধের দীর্ঘ ৭ বছর অতিবাহিত। এ নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় ১৫ হাজার জেলে পরিবার।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ মাদক ও সীমান্তে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকার উক্ত নদীতে মাছ শিকার না বন্ধ করে দেয়।

এরপর থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা কর্মহীন জেলেদের পরিবারে নেমে আসে অভাব অনটের কালোছায়া। কারন এ নদী পাড়ের জেলেরা মাছ শিকার ছাড়া অন্য কর্ম করে পরিবারের নিত্য-প্রয়োজনীয় পণ্য জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নদী পাড়ের বেশ কয়েকজন জেলের সাথেকে কথা বলে জানা যায়, নিয়মিত অভাব অনটন লেগে থাকায় জেলে পরিবারের ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে পিছিয়ে পড়ে আছে। তাদের অনেক কমলমতি ছেলে-মেয়েরা মানুষের বাড়ি কাজ করে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করার সহযোগীতা করছে।

কষ্টে দিন পার করছে অসহায় জেলে পরিবার

এদিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে জালিয়াপাড়া নামক একটি এলাকা রয়েছে। সেখানকার বেশীরভাগ মানুষের বসতি হচ্ছে নাফ নদীর কিনারায়। তারা যুগের পর যুগ নদীতে মাছ শিকার করে পরিবারের জিবীকা নির্বাহ করে। মাছ শিকার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে
অনেক জেলে পরিবারের সদস্যদেরকে সময় মত বরন পোষন দিতে না পেরে চোঁখের পানিতে বুক ভাসাচ্ছে।

উক্ত এলাকায় পরিবারের অভাব অনটন লেগে থাকায়। সৃষ্ট পারিবারিক কলহের কারনে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার করে মারা যাওয়ার ঘটনাও গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল।

এদিকে নাফ নদে মাছ শিকার পুনরায় চালু করার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের সাথে নিয়ে জেলে সংগঠনের নেতারা মানববন্ধন করে সরকার বরাবরে স্বারকলিপি প্রেস করেছিল।

তাদের সেই দাবি এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় ১৫ হাজার জেলে পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা লেগেই আছে। জেলেদের দাবী সরকার যদি পুনরায় নদীতে মাছ শিকার করার সুযোগ দেয় তাহলে তাদের পরিবারে অভাব অনটন চিরতরে মুছে যাবে।

এ বিষয়ে সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও মাদকের আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে সরকার নাফ নদে মাছ শিকার বন্ধের ঘোষনা দিয়েছিল দীর্ঘ ৭ বছর অতিবাহিত হয়েছে।

এরপর থেকে নদীতে মাছ শিকার করে জিবীকা নির্বাহ করা জেলেরা তাদের পরিবারের ভরন পোষন জোগাড় করতে বেকাদায় পড়ে যায়। তিনি দু:খ প্রকাশ করে আরও বলেন, নাফ নদে মাছ শিকার বন্ধ থাকলে এখনো বন্ধ হয়নি মাদক পাচার।

তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে নাফ নদের মাছ শিকার বন্ধের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে জেলেদেরকে পুনরায় মাছ শিকার করতে দিলে তাদের পরিবারের অভাব অনটনের চিত্র পাল্টে যাবে। পাশাপাশি জেলেদের শিকার করা মাছ গুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করতে পারলে টেকনাফে সরকারের চলমান উন্নয়নের অগ্রযাত্রা আরও বেগবান হবে।

আর যে সমস্ত মাদক ব্যবসায়ীরা নদীপথ ব্যবহার করে জেলের ছদ্মবেশ ধারন করে মাদক পাচারসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত তাদের চিহ্নিত করে তাদেরকে আইনের আওতাই নিয়ে আসার জন্য আইন-শৃংখলা বাহিনীকে সহযোগীতা করতে হবে বলেও জানান তিনি।

টেকনাফ উপজেলা মৎস্য র্কমর্কতা মো.দেলোয়ার হোসাইন জানান, মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে নাফ নদে মাছ শিকারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।

তবে যারা প্রকৃত জেলে তাদেরকে দিনের বেলায় মাছ শিকার করার সুযোগ করে দিলে জেলে পরিবার গুলোর কষ্ট অনেকটা লাগব হবে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.কামরুজ্জামান জানান মাদক পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদে মাছ শিকার বন্ধের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

তারপর অসহায় জেলে পরিবার গুলোর কথা চিন্তা নদীতে মাছ শিকার পুনরায় চালু করার জন্য করে মাননীয় জেলা প্রশাসকসহ সরকারের উর্ধতন কর্তপক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। নিষেধাজ্ঞাটি তুলে নিলে জেলেদের মাছ শিকারে আর বাধা থাকবেনা।##